রাজার অন্তঃপুর
দিবা-নিশা
দিবা। রাজা ঢাকায় চলিল কেন ভাই?
নিশা। তোর জন্য ঢাকাই কাপড় আন্তে।
দিবা। আমি ত এমন হুকুম দিই নে, আমার যে ঢাকাই কাপড় আছে।
নিশা। তবে তোর বর আন্তে।
দিবা। কেন এদেশে কি বর পাওয়া যায় না?
নিশা। এ দেশে তেমন দাড়ী পাওয়া যায় না—তোমাকে একটা নেড়ে বর এনে দেবে।
দিবা। তা তার জন্য আর রাজার নিজে যাবার দরকার কি? আমায় বললে আমি একটা খুঁজে পেতে নিতুম। না হয় গোবিন্দ বখশীকে একটা পরচুলো দাড়ি পরিয়ে ঘরে নিয়ে আসতুম।
নিশা। আচ্ছা বখশী মশাইকে বলে রাখ্ব।
দিবা। দূর হ পাপিষ্ট—তোর কাছে কোন কথাই বলবার যো নাই। তা যাক;—সত্য সত্য রাজা ঢাকায় চলল?ৌ কেন?
নিশা। কি জানি কেন—রাজা রাজড়ার মন তুমি আমি কি বুঝ্ব।
দিবা। তা, রাজা কি ফিরিবে না নাকি?
নিশা। সে কি কথা? অমন কথা মুখে আনতে আছে।
দিবা। রাণী কলাবতী অত কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়েছে কেন?
নিশা। স্বামী বিদেশে গেলে একটু কাঁদ্তে হয়।
দিবা। দূর! স্বামী ছেড়ে স্বামীর বাবার জন্য আমি কাঁদিনে।
নিশা। তোর সাত পুরুষের ভিতর স্বামী নাই তুই আবার কাঁদিবি কার জন্য? বরং রাজার জন্য একটু কাঁদিস ত কাঁদ।
দিবা। না ভাই তা পারিব না। বরং মনের দুঃখে বসে বসে লুচি মণ্ডা খাই গে চল।
নিশা। তাও মন্দ নয়।
SCENE I
রাজা। আমার কি অপরাধ? কি জন্য দিল্লীশ্বর আমার উপর পীড়ন করিতে উদ্যত?
সুবা। আপনি মুসলমানের দ্বেষক। পাদশাহ মুসলমানের ধর্মরক্ষক। সুতরাং বাদশাহ—
রাজা। আমি কিসের মুসলমানের দ্বেষক? আমার রাজ্যে হিন্দু মুসলমানের তুল্য—
সুবা। প্রতাপনগরে একটি মসজীদ নাই —মুসলমানে নমাজ করিতে পায় না।
রাজা। আমি মসজীদ প্রস্তুত করিয়া দিব।
সুবা। প্রতাপনগরে একটি কাজি নাই—মুসলমানের বিচার কি হিন্দুর কাছে হয়?
রাজা। আমি কাজি নিযুক্ত করিব।
সুবা। মহারাজ—আপনি যদি বাদশাহের এরূপ বশ্যতাপন্ন হন, তবে বাদশাহ কেন আপনাকে রাজ্যচ্যুত করিবেন? কিন্তু আসল কথা এখনও বাকি আছে—প্রতাপনগরে মুসলমান জবাই করিতে পায় না—তার কি হইবে?





